ধর্মঘট নিয়ে কঠোর বার্তা দিল রাজ্য। ডিএ নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়ে আছে বিগত কয়েকমাস ধরেই। কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে কর্মীদের ৩৮ শতাংশ হারে ডিএ দেয়, রাজ্য সরকার সেখানে দেয় ৩ শতাংশ হারে ডিএ, যা ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করার কথা বলেছে সরকার। তবে সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ চাইছেন, যা তৃণমূল সরকার দিতে নারাজ। তাই বাধ্য হয়েই সরকারি কর্মীরা বর্ধিত হারে ডিএ দেওয়ার দাবিতে শুক্রবার প্রশাসনিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
৫ দশক পর ধর্মঘট, বকেয়া ডিএ সহ একাধিক দাবী।
ডিএ বাড়াতে না পারলেও ধর্মঘট অসফল করার জন্য কোমর বেঁধে ইতিমধ্যেই লেগে পড়েছে রাজ্য সরকার।একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে শুক্রবার রাজ্যের সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজকর্ম অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক রাখতে সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিল নবান্ন।
আজ, বৃহস্পতিবার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে রাজ্যের অর্থ দফতরের তরফে। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া শুক্রবার কোনও সরকারি কর্মচারী ছুটি নিতে পারবেন না। বিজ্ঞপ্তিতে আরও লেখা আছে, স্কুল-কলেজ-সহ যাবতীয় সরকারি এবং সরকার পোষিত প্রতিষ্ঠান ওই দিন পূর্ণ সময় খোলা থাকবে।
এখানেই শেষ নয়, রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে আলাদা ভাবে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষককে শুক্রবার ডিউটি করতে হবে। শুক্রবার থেকে রাজ্যজুড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা বিতরণের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। তাই, আগামীকাল শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওই দিন স্কুলে না আসা সব শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের ছাড় দেওয়া হবে। কেউ যদি হাসপাতালে ভর্তি থাকেন কিংবা কোনও কর্মচারী যদি আগাম ছুটি নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে, তাঁর ছুটি মঞ্জুর হবে শুক্রবার। এছাড়া যদি কেউ বিনা অনুমতিতে শুক্রবার অনুপস্থিত থাকেন অফিসে, সেক্ষেত্রে তাঁর বেতন কাটা যাবে তো হবেই, কর্মজীবনের মেয়াদও এক দিন কমবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
পাশাপাশি, প্রতিটি দফতরের বিভাগীয় প্রধানকে নবান্নের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, কোনও সরকারি কর্মচারী শুক্রবার গরহাজির থাকলে তাঁকে শো-কজ়ের চিঠি দিতে হবে। তার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর উদ্দেশে জানতে চাওয়া হবে যে, কেন তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে না? প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলে তবেই শুক্রবারের ছুটি মঞ্জুর করা হবে সেই কর্মচারীর।
ডিএ ধর্মঘট ব্যর্থ করতে নির্দেশিকা রাজ্যের, যারা ধর্মঘট করবে তাদের কি হবে জেনে নিন।
তবে সরকারের এমন উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করে চাপ তৈরী করার ঘটনা এই প্রথম নয়, এর আগেও গত ফেব্রুয়ারিতে বকেয়া ডিএ-র দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশ যখন কর্মবিরতির কথা জানিয়েছিল, তখনও কর্মীদের বিরুদ্ধে এমন কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছিল নবান্ন। কিন্তু কর্মীরা তাতে বিন্দুমাত্র দমে না গিয়ে নিজেদের অবস্থানে অনঢ় ছিল। কালকের ধর্মঘটেও কর্মীরা নিজেদের জেদ বজায় রেখে ধর্মঘট সফল করতে পারেন কিনা, এখন সেটাই দেখার।
Written by Parna Banerjee.