ভারতে বন্ধ হয়ে গেল SC, ST, OBC Minority Scholarship. সমালোচনার ঝড় দেশ জুড়ে!

শিক্ষার অধিকার আইন জারি সারা দেশে। তবে সারা দেশ জুড়ে এবারে Minority Scholarship বন্ধ করা হলো। এর সাথেই বন্ধ করা হলো SC, ST, OBC Scholarship. সমাজের একটা শ্রেণীর শিক্ষার্থীর ওপরে এর কুপ্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন অনেক শিক্ষা অনুরাগী মানুষেরা। এর ফলে কি খর্ব হচ্ছে শিক্ষার অধিকার আইন! আজকের বিশেষ আলোচনায় এই বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক।

সংখ্যালঘু বৃত্তির তথা Minority Scholarship সাথে সাথে SC, ST, OBC Scholarship এর বহু আবেদন খারিজ।

পড়াশোনাকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেকোনো ধরণের বৃত্তি বা Scholarship এর গুরুত্ব শিক্ষার্থীর কাছে খুবই গুরুত্ব রাখে। শিক্ষার অধিকার আইন 2009 অনুসারে সবার জন্য বিনামূল্যে পুঁথিগত শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর পাশাপাশি নানা ধরণের বৃত্তির ব্যবস্থাও করে থাকে কেন্দ্র সরকার। এর পাশাপাশি প্রত্যেক রাজ্যেই রাজ্য সরকার বিভিন্ন ধরণের স্কলারশীপের ব্যবস্থা করে থাকে।

কেন্দ্রীয় সরকার SC, ST, OBC এবং প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সংখ্যালঘু তথা Minority শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাক-ম্যাট্রিক বৃত্তি বন্ধ করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে বলেছে যে, শিক্ষার অধিকার আইন তথা RTE Act এর আওতায় থাকা শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার দরকার নেই। কারণ, সরকার ইতিমধ্যেই প্রতিটি শিশুকে বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা অর্থাৎ প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের জন্য ব্যবস্থা করেছে। সুতরাং তাদের আর আলাদা করে কোন রকম বৃত্তির প্রয়োজন নেই।

শিক্ষার অধিকার তথা RTE Act – 2009, ভারতের প্রতিটি শিশুকে বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারকে বাধ্য করে। কেন্দ্রীয় সরকার 2022-23 শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির তফসিলি জাতি (SC), তফসিলি উপজাতি (ST), অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায় (OBC) এবং সংখ্যালঘু (Minority) সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য Minority Scholarship সহ প্রাক-ম্যাট্রিক বৃত্তি বন্ধ করেছে।

শুধুমাত্র ক্লাস-9 এবং ক্লাস-10 এর ছাত্রছাত্রীরা এখন প্রাক-মেট্রিক বৃত্তি প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। একথা বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

এই বৃত্তি কি ধরণের?
প্রাক-ম্যাট্রিক বৃত্তিতে, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি যথাক্রমে 75:25 অনুপাতে শিক্ষার ক্ষেত্রে আর্থিক বোঝা ভাগ করে নেয়। সমস্ত উৎস থেকে পিতামাতার আয় বার্ষিক 2.50 লক্ষ টাকার বেশি না হলে একজন শিক্ষার্থী এই Minority Scholarship পাবার যোগ্য।

এর আগে, এই SC, ST, OBC সহ Minority Scholarship সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ণ মন্ত্রকের অধীনে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য, উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনে ST ছাত্রদের জন্য এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনে সংখ্যালঘুদের জন্য Minority Scholarship প্রদান করা হত। তবে এবার থেকে সেক্ষেত্রে আনা হচ্ছে এই পরিবর্তন।

কি পরিমাণে অর্থ দেওয়া হয় এই স্কলারশিপে?
হিসেব মতো স্কলারদের জন্য এই অর্থের পরিমাণ ছিল প্রতি মাসে 225 টাকা এবং হোস্টেলের পড়ুয়াদের জন্য এক বছরে 10 মাসের জন্য প্রতি মাসে 525 টাকা। ডে-স্কলারদের জন্য বই এবং অ্যাডহক অনুদান ছিল 750 টাকা এবং হোস্টেলের পড়ুয়াদের জন্য 1,000 টাকা। এবারে এই টাকা SC, ST, OBC, Minority পড়ুয়ারা শুধুমাত্র অষ্টম শ্রেণীর পর থেকেই পাবেন।

গত বছর কোটি কোটি শিক্ষার্থীর আবেদন বাতিল হয়েছে। এ বছরও কয়েক কোটি SC, ST, OBC, Minority Scholarship পেতে শিক্ষার্থীরা  বৃত্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সুতরাং এই নিয়ে বেশ সরগরম রাজ্য সহ গোটা দেশ। কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে নোটিশ পাঠিয়েছে যে ইনস্টিটিউট নোডাল অফিসার (আইএনও), জেলা নোডাল অফিসার (ডিএনও), স্টেট নোডাল অফিসার (এসএনও) শুধুমাত্র 9ম এবং 10ম শ্রেণীর জন্য আবেদনগুলি যাচাই করতে পারে।

আবেদনেই 50 হাজার! মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক যোগ্যতায় আবেদন। বিস্তারিত দেখুন।

শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিরা এবং অভিভাবকরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। ডঃ ভি.পি. উন্নয়ন শিক্ষাবিদ নিরঞ্জনারাধ্য এটিকে একটি ‘দুর্ভাগ্যজনক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এই সম্প্রদায়ের শিশুদের শিক্ষার মূলধারায় প্রবেশের জন্য উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। “বিনামূল্যে ইউনিফর্ম, পাঠ্যপুস্তক, সাইকেল, জুতা এবং বৃত্তি হল SC/ST/অনগ্রসর শ্রেণী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে আসা দরিদ্র শিশুদের তালিকাভুক্তি, ক্লাসে যোগদান এবং প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করার জন্য প্রণোদনা,” বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে এমনটাই জানালেন তিনি।

সেন্টার ফর এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস তথা CERA থেকে রিয়াজ আহমেদ এটিকে ‘তাদের অর্থাৎ শিশুদের অধিকার খর্ব করার প্রয়াস এবং এর ফলে তাদের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করা’ বলে অভিহিত করেছেন। “আরটিই একটি মৌলিক অধিকার। যাইহোক, প্রাক-ম্যাট্রিক বৃত্তি হল ছাত্রদের শিক্ষাগত উন্নতির জন্য একটি সরকারি প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে আরও নন-এনরোলমেন্ট এবং ড্রপআউট হবে। ইতিবাচক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে এটি একটি পশ্চাদপসরণমূলক পদক্ষেপ।”

হাতে মাত্র 9 দিন, এমাসেই আবেদন করা যাচ্ছে এই 3 টি নতুন স্কলারশিপে।

বাস্তব সমাজে এর কতটা প্রভাব পড়বে, সেটাই দেখার। তবে শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় শিক্ষা প্রদানের রীতিতে কোন রকমের পরিবর্তন হচ্ছে না। SC, ST, OBC এবং Minority Scholarship সংক্রান্ত এই পরিবর্তন সরকারের সিদ্ধান্ত। এমন আরও আপডেট খবর পেতে আমাদের সাথে থাকুন। আপনার কোন মতামত জানানোর থাকলে আমাদের জানান কমেন্ট বক্সে। ধন্যবাদ।
Written by Mukta Barai.

সুখবর বাংলা

Leave a Comment