পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সবাই পাশ। ফেল করলেও পাশ করার সুযোগ।

পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করল নতুন নিয়ম! যার মাধ্যমে এখন থেকে আর কেউই ফেল করবে না পরীক্ষায়, সকলে করবে পাস। কারণ নতুন নিয়মে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা এতটাই সহজ হয়ে যেতে চলেছে, যে কারোর পক্ষে আর ফেল করাটাই সম্ভব হবে না। এখন নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করছে, কি এমন বদল এলো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়? আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেব এবার।

কি কি বদল এসেছে উচ্চমাধ্যমিকের নতুন নিয়মে?

পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে ঘোষণা করেছে রাজ্যের সমস্ত উচ্চ প্রাথমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিতে এক নতুন শিক্ষা আইন দ্রুত লাগু করার কথা। এই শিক্ষা আইনেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে বিরাট বদলের কথা ভেবেছে রাজ্য সরকার, যা আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু হতে পারে। এক্ষেত্রে মূলত যে সমস্ত পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল –

১. নতুন এই শিক্ষানীতি অনুযায়ী স্কুল শিক্ষা দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে যে এখন থেকে স্কুলেও চালু হতে চলেছে কলেজ ও ইউনিভার্সিটি গুলোর মত সেমিস্টার সিস্টেম। নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীদের এই সেমিস্টার নিয়মেই পড়াশোনা করতে হবে।

২. সেমিস্টার সিস্টেমে এবার থেকে এক বছরে ২ ভাগে হতে চলেছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। স্কুল শিক্ষা দপ্তরকে অভিনব প্রস্তাব সংসদের। সংসদের সভাপতি চিরঞ্জিত ভট্টাচার্য সেদিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, “CBSE বোর্ড কর্তৃক বছরে দুবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ করার কথা ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই অনুকরণেই রাজ্যেও চালু করা হতে চলেছে নতুন এই নিয়ম।

এই নিয়ম অনুযায়ী বছরে যে দুটি পরীক্ষা হবে সেই দুটি পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাপ্ত নম্বরের গড় মানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হবে ফাইনাল পরীক্ষার মার্কশিট।” অর্থাৎ এর থেকে স্পষ্ট হয় যে এখন থেকে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় নম্বর তোলার জন্য আর কোন কষ্ট করতে হবে না। কারণ বছরে দু ভাগে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়ার দরুন তাদের একবারে পুরো সিলেবাস কমপ্লিট করার ভয় থাকবেনা।

৩. তিনি আরো বলেছেন, “সংসদের এই নতুন নিয়ম অনুসারে বছরে প্রথম যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাটি হবে সেটি সম্পূর্ণ অবজেক্টিভ টাইপের প্রশ্নের উপর ভিত্তি করে করা হবে। এক্ষেত্রে কোন বড় প্রশ্ন থাকবে না। অপরদিকে দ্বিতীয় পর্যায়ের যে পরীক্ষাটি আয়োজিত হবে সেটিতে থাকবে সংক্ষিপ্ত এবং বর্ণনামূলক ধরনের প্রশ্ন উত্তর। প্রথম পরীক্ষাটি হবে নভেম্বর মাসে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষাটি হবে পরের বছরের মার্চ মাসে।” আগামী তিন বছরের মধ্যে ধীরে ধীরে এই সেমিস্টারের নিয়ম চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকার কর্তৃক।

আরও পড়ুন, প্রত্যেক পরীক্ষার্থী পাবে ফ্রিতে টেস্ট পেপার। কবে থেকে দেবে?

৪. তবে সেমিস্টার নিয়মে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পড়ুয়াদের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে না। সেমিস্টার পদ্ধতিতে থিওরি পরীক্ষাগুলি নেওয়া হবে। আর প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোন সেমিস্টার পদ্ধতি প্রচলন থাকবে না। এই থিওরি পরীক্ষাগুলো স্কুলেই নেওয়া হবে।

৫. এছাড়াও উচ্চমাধ্যমিকের প্রশ্নপত্রের প্যাটার্ন নিয়ে আসছে বড়সড় পরিবর্তন। গত কয়েক বছর আগে থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে মাল্টিপেল চয়েস টাইপের প্রশ্ন চালু করার নিয়ম লাগু হয়েছিল। তবে এবার স্কুল শিক্ষা দফতর কর্তৃক জানানো হয়েছে এই মাল্টিপেল চয়েস বিভাগে আরও বাড়ানো হবে প্রশ্নের সংখ্যা। সূত্র মারফত জানা গেছে, এবার থেকে প্রতি পেপারে নাকি ৫০ শতাংশ প্রশ্নই হবে মাল্টিপল চয়েস টাইপের। অর্থাৎ আগের চেয়ে আরো সহজ হতে চলেছে পরীক্ষায় নম্বর তোলা।

নতুন এই সেমিস্টার পরিকল্পনা নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানান যে, “জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় একটি মূল্যায়নের উপর নির্ভরশীল একটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মূল্যায়ন সম্ভব নয় ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে পড়ুয়াদের প্রকৃত মেধা সম্বন্ধে সঠিকভাবে জানা যায়।” উল্লেখ্য, নতুন এই নিয়মটি সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত সদুত্তর মেলেনি রাজ্যের উচ্চ মহল কর্তৃক। তবে যদি তা লাগু হয়, তো এবার থেকে পরীক্ষায় নম্বর তোলা জলের মতো সহজ হবে পরীক্ষার্থীদের জন্য।
Written by Nabadip Saha.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button