আর নয় আধার কার্ড (Aadhaar Card), এবার থেকে বাংলার মানুষের জন্য এই Unique ID Card চালু মুখ্যমন্ত্রীর। আধার কার্ডের পাশাপাশি এই কার্ড করলেই পাবেন দারুন সুবিধা। কাদের জন্য এই কার্ড, কি কি সুবিধা হবে, জেনে নিন।
Unique ID Card replace Aadhaar Card
বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রেই যেমন রেশন থেকে শুরু করে ব্যাংক একাউন্ট সবেতেই আধার সংযোগ করা বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সব সময় সর্বত্র আধার সংযোগ করানোর জন্য অত্যন্ত কম ঝক্কি পোহাতে হয় না সাধারণ মানুষকে। অন্যান্য রাজ্যের সরকার এ নিয়ে মুখ না খুললেও আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হয়েছেন বাংলার সাধারণ মানুষদের পক্ষ থেকে।
সাধারণ মানুষের এই অসুবিধা যাতে বন্ধ হয় তাই তিনি এবার উদ্যোগ নিয়েছেন আধারের পরিবর্তে অন্য এক ধরনের কার্ড চালু করার। এ বার রাজ্যের প্রত্যেক পরিবারের জন্য একটি করে নির্দিষ্ট পরিচিতি (ইউনিক আইডেন্টিটি) তৈরির পথে পা বাড়াতে চলেছে তারা। এই Unique ID Card পশ্চিমবঙ্গে চালু হলে একটি পরিবার থেকে যে কোন সদস্য যে কোনো রকম সরকারি সুবিধা অতি সহজেই ভোগ করতে পারবেন।
Unique ID Card benefits
বর্তমানে বিভিন্ন কাজে প্রতিবার আধার সহ বিভিন্ন ডকুমেন্টস জমা করতে হয়। এই কার্ডের মধ্যে সমস্ত তথ্য থাকবে। তাই একবার Unique ID Card পেয়ে গেলে বারে বারে জমা দিতে হবে না নথিপত্র। এই কার্ডের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নিন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এই নতুন ইউনিক আইডেন্টিটি (Unique ID Card) তৈরি করার সময়ই একটি পরিবারের সমস্ত সদস্যদের সকল প্রয়োজনীয় নথিপত্রের প্রমাণ নিয়ে রাখা হবে। যার ফলে যে কোন সরকারি প্রকল্পে হোক না কেন বারবার তাদের গিয়ে সেখানে নাম নথিভুক্ত করতে হবে না। সরকার এই ইউনিক আইডেন্টিটির মাধ্যমে সংগৃহীত সমস্ত তথ্য থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই প্রকল্পে তাদের জন্য আবেদন করে দেবে।
সরকারি পরিষেবা পেতে এখন অনেক কাগজপত্রই পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য আলাদা-আলাদা ভাবে জমা দিতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে, বারবার কাগজ জমা দেওয়ার ঝক্কি অনেকটাই কমবে। তবে শুধু রাজ্যের নাগরিকরাই নন সরকারেরও বিশেষ সুবিধা হতে চলেছে এর মাধ্যমে। কারণ এই নতুন ব্যবস্থা চালু হলে তাদেরকে বারবার নতুন করে সমস্ত নথিপত্র যাচাই করণ করতে হবে না।
সিস্টেমে পূর্বের সংরক্ষিত তথ্য থেকেই সহজে তারা নিজেদের কাজ সেরে নিতে পারবেন। এই ব্যাপারে সম্প্রতি এক নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই এই নতুন ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে সমগ্র রাজ্যবাসীদের জন্য।
কর্নাটকে ‘কুটুম্ব’ নামে একটি পদ্ধতি চালু আছে। তাতে সেখানকার নাগরিকদের বিশেষ সুবিধা হয়েছে।
আগে এখানে যে কোন রকম সরকারি পরিষেবা পেতে হলে মানুষদের বারবার নথিপত্র জমা দেওয়ার ঝক্কি পোহাতে হত। কিন্তু নতুন এই পদ্ধতি চালু হবার ফলে এখন প্রতিটি পরিবারকে একটি নির্দিষ্ট আইডেন্টিটি নম্বর দেওয়া হয়। যার অধীনে ধরা থাকে সেই পরিবার কোন প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে অথবা পাচ্ছে না। সেই মতো পরবর্তীকালে সরকারি প্রকল্পের স্বচ্ছতা আরো বাড়ে এবং যোগ্য ব্যক্তিদের সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়।
তার সঙ্গে সমস্ত তথ্য ভান্ডার পূর্ব থেকে সংরক্ষিত থাকায় হ্যাপা পোহাতে হয় না সাধারণ মানুষদের এমনকি সরকারি প্রতিনিধিদেরও। এই পদ্ধতির ফলে অনেকটা মসৃণ হয়েছে সেই রাজ্যে সরকারি পরিষেবা প্রদানের পথ।
প্রশাসনিক মাধ্যমে খবর মিলেছে, রাজ্যের সর্বত্র সমীক্ষা চালিয়ে এই পরিবারভিত্তিক তথ্যভান্ডার তৈরি করা হবে।
অভিজ্ঞ আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, আধার কার্ডে যেমন বায়োমেট্রিক দ্বারা ব্যক্তির সমস্ত তথ্য সুরক্ষিত থাকে তেমনি এই নতুন ইউনিক আইডেন্টিটি কার্ডেও (Unique ID Card) বায়োমেট্রিক দ্বারা সমস্ত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে। সরকারের সার্ভারে সেই (Unique ID Card) তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষিত থাকবে। ব্যাক্তি কেবল নিজেই অ্যাক্সেস করতে পারবেন তার সেই তথ্য। যে সমস্ত পরিবার কোনও না কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নেয়, প্রাথমিক ভাবে তাদেরই এই পরিচিতি দেওয়া হবে। তবে কোন তৃতীয় ব্যক্তি যদি পরিষেবার জন্য আবেদন করেন তাকেও ফিরিয়ে দেবেনা রাজ্য সরকার।
রাজ্য সরকারের নতুন এই উদ্যোগ নিয়ে একাধিক বিশেষজ্ঞের একাধিক মত শোনা গেছে। যেমন, এক আধিকারিকের কথায়, “ডিজিটাল রেশন কার্ডে প্রায় ৯৭% আধার যোগ (Digital Ration Card) তো রয়েছেই, তার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত ৭২% কার্ডে আঙুলের ছাপ দিয়ে যাচাই প্রক্রিয়াও শেষ। বাকিটাও দ্রুত করা হচ্ছে। আশা করা যায়, এ বছরের শেষের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া যেমন শেষ হবে, তেমনই পরিবারভিত্তিক নথিবদ্ধকরণও চালু করা যাবে।” আরেক ব্যক্তি জানিয়েছেন, “সরকারের বাজেট তথ্য অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরে (২০২৩-২৪) সম্ভাব্য রাজস্ব ঘাটতির অঙ্ক প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা।
রাজকোষ ঘাটতি পৌঁছতে পারে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকায়। এতে দৈনন্দিন খরচ, বেতন-পেনশন-ভাতা, ঋণ শোধে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা তুলে রেখে অনুদান প্রকল্পগুলি চালিয়ে যাওয়া মুখের কথা নয়। সে ক্ষেত্রে যদি এই পদ্ধতি চালু করা হয় তাহলে রাজ্য সরকারের কাছে নির্দিষ্ট তথ্যভাণ্ডার (Unique ID Card) থাকবে প্রতিটি ব্যক্তির সম্পর্কে। যার দ্বারা বেছে বেছে মানুষকে সরকারি পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে বাঁচবে রাজ্য সরকারের খরচও অনেকটাই। ’’
Written by Nabadip Saha.