ফ্রি রেশন (Free Ration Scheme on FCI NFSA)

ফ্রি রেশন প্রকল্পের বড় বদল

একের পর এক কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে দেশের গরীব মানুষের মাথায় হাত। এবার ফ্রি রেশন (FCI Free Ration NFSA) নিয়ে নয়া সিদ্ধান্ত। এমনিতেই দিনের পর দিন লাগাতার জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম উর্ধ্বমুখী, দেশজুড়ে কাজের অভাব, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যথেষ্ট খারাপ, আবার তার উপরে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত দেশবাসীর ওপর নতুন আরেক ধাক্কা এনে দিল।

এবার দেশের নিম্ন মধ্যবিত্ত, গরীব মানুষেরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে চলেছেন। রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে কেন্দ্র এবং রাজ্য, দুই সরকার সাধারণ মানুষকে ফ্রি রেশন সহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের সাধারণ মানুষকে রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে একাধিক স্কিম তৈরি করে সম্পূর্ণ ফ্রি রেশন বা বিনামূল্যে কিম্বা নামমাত্র মূল্যে খাদ্য সামগ্রী নিয়মিত সরবরাহ করছে।

শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মানুষের দোরগোড়ায় রেশন ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়ার জন্য দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। আর ফ্রি রেশন ব্যবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের (NFSA) আওতায় দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষেরা রাজ্য সরকারের এই ধরনের প্রকল্পের ফলে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পেয়ে থাকেন। যার ফলে তারা যথেষ্ট উপকৃত হন। এবার কেন্দ্রীয় সরকার এমন এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে, যাতে এই গরীব মানুষগুলোই সমস্যায় পড়তে চলেছে। কি সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার?

Open Market Sales Scheme for FCI

ওপেন মার্কেট সেলস স্কিম (Open Market Sales Scheme) OMSS পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় সরকার পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আর এই পরিবর্তনের ফলে রাজ্যগুলিকে সেই রাজ্যের গরিব মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করতে হলে এফসিআই (FCI E-Tender) এর ই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে। এর আগের নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে রাজ্যগুলি গরিব মানুষকে খাদ্যশস্য দেওয়ার জন্য নিজেদের চাহিদা মতন এফসিআই থেকে সরাসরি খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে পারতো, সেই পদ্ধতিতে আর খাদ্যশস্য পাবে না তারা।

সাধারণত এই ই- টেন্ডার ব্যবস্থার মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যবসায়ীরা এফসিআই থেকে চাল, গম কিনে থাকে। আর এবার থেকে সেই একই পথে হেঁটে রাজ্য সরকারকে সেই রাজ্যের গরিব মানুষের জন্য খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে হলে ই টেন্ডারে (E-Tender) অংশ নিতে হবে। এর ফলে রাজ্যগুলি এখন স্পষ্টভাবে বুঝতেও পারছে না, যে শেষ পর্যন্ত বিনামূল্যে খাদ্যশস্যের যে ফ্রি রেশন প্রকল্প রাজ্য সরকার চালু রেখেছে, তা বাস্তবায়িত করা যাবে কিনা। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের এই নতুন ই- টেন্ডার সিস্টেমে অংশ নিলে কতটা খাদ্যশস্য রাজ্যগুলি পেতে পারে?

এই বিষয়ে আবার কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, ই- টেন্ডার সিস্টেমে অংশ না নিয়ে রাজ্যগুলো ইচ্ছেমতো এফসিআই (FCI) থেকে খাদ্যশস্য নিলে বাজারে চাল আটার দাম এর উপরে প্রভাব পড়ছে। তাই সেই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই এই নীতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন, আপনার কাছে পুরনো 2 টাকার বড় কয়েন থাকলেই, 30 হাজার টাকায় বেচুন, সুযোগ সীমিত।

কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছে দেশের বেশ কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল। বিশেষ করে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার সেখানকার দরিদ্র সীমার নিচে থাকা মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ার জন্য এফসিআই এর কাছে কুইন্টাল পিছু ৩৪০০ টাকা দামে ১৩৮১৯ টন চাল দাবি করেছিল। এবার কেন্দ্রীয় সরকারের এই নতুন নীতি গ্রহণের ফলে সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়নি।

কিছুদিন আগেই কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে দিয়ে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসে। আর নির্বাচনের সময় বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস। ফলে এরপরেই বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ফলে কর্নাটকে সেই প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস রাখতে পারবে কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

আরও পড়ুন, বাংলার কৃষক বন্ধুদের জন্য 16000 টাকা ঘোষণা, কিভাবে পাবেন জেনে নিন।

নিয়ম অনুযায়ী Food Corporation of India কেন্দ্রীয় খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রকের অধীনের সংস্থা হলেও রাজ্য সরকারগুলোকেও চাহিদা মত চাল গম সরবরাহ করে। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ অনুযায়ী কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বা রেশনে রাজ্যগুলির যা নিয়মে প্রাপ্য হয় সেটা বিনামূল্যেই এফসিআই থেকে দেওয়া হয়। এবার তার বাইরে যদি রাজ্যগুলি ফ্রি রেশন প্রকল্পে রাজ্যবাসীকে বিশেষ সুবিধা দিতে চায়, তাহলে সেই অতিরিক্ত খাদ্যশস্যের প্রয়োজন মেটানোর জন্য এফসিআই থেকে টাকার বিনিময়ে রাজ্য সরকারকে কিনতে হয়।

আরও পড়ুন, রেশন নিয়ে বড় খবর, ফ্রি রেশন পেতে হলে আজই করুন এই কাজটি।

অনেকটা কম দামেই রাজ্য সরকার এফসিআই থেকে এই অতিরিক্ত খাদ্যশস্য কিনে থাকে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের এই নতুন নীতি গ্রহণের কারণে দেশজুড়ে গরিব মানুষের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে চলা প্রকল্পগুলি আদৌ আর চলবে কিনা তাতেই প্রশ্ন চিহ্ন উঠে গিয়েছে।
আর অন্যদিকে লাগাতার জিনিস পত্রের দাম বাড়িয়ে জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে আপনার মতামত নিচে কমেন্ট করে জানাবেন।