মিড ডে মিল (PM Poshan Mid Day Meal)

বাংলার প্রতি দিল্লির বঞ্চনা! এবার কোপ পড়তে পারে মিড ডে মিল (PM Poshan Mid Day Meal) এ!
কয়েক লাইনের একটি টেক্সট মেসেজ। আর সেখান থেকেই রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। কি আছে ওই টেক্সট মেসেজে? তবে এই ‘Text Message’ আসার পর থেকেই একটা প্রশ্ন সামনে এসেছে, তবে কি এবার রাজ্যের স্কুলগুলির শিশুদের পেটের ভাতও কেড়ে নিতে চাইছে মোদি সরকার? প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে।

PM Poshan Mid Day Meal Scheme

তার কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় বরাদ্দের টাকা পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়া বন্ধ রেখেছে মোদি সরকার। একশ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা কেন্দ্র দিচ্ছেনা। সরকারি ভাবে বহুবার আবেদন নিবেদন করা হলেও কর্ণপাত করেনি কেন্দ্র। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই যে কেন্দ্রীয় সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা একরকম নিশ্চিতভাবেই বলা যায় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এরপরে শিক্ষা দপ্তরের তরফে একটি মেসেজ পাঠানো হয়েছে। এই টেক্সট মেসেজে লেখা আছে, শিক্ষা দপ্তরের সচিব মনিশ জৈনের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছে।

মিড ডে মিল

যদি এক সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের স্কুলগুলিতে চলা মিড ডে মিলের খরচের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (Mid Day Meal Utilisation Certificate) বা UC জমা না দেওয়া হয়, তাহলে ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনার মত এই প্রকল্পেও টাকা বন্ধ দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে কেন্দ্র। আর এর পরেই রাজ্য প্রশাসনে শুরু হয়েছে উদ্বেগ। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে মিড ডে মিলের হিসাব জরুরী ভিত্তিতে তলব করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, শোনা যাচ্ছে এবারের পঞ্চায়েত ভোটে নাকি, মিড ডে মিল এর ফান্ড থেকে ভোট কর্মীদের টাকা দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। আর এর পরই নাকি, নড়ে চড়ে বসেছে কেন্দ্র। তাই UC জমা নেওয়ার এতো তোড়জোড়।

বেশকিছু জেলা এই মেসেজের পরে ইতিমধ্যেই মিড ডে মিল (Mid Day Meal) এর রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে। কিছু জেলা বাকি রয়েছে। তারা পাঠিয়ে দিলেই বিকাশ ভবনের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মিড ডে মিল সংক্রান্ত যাবতীয় রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষা দপ্তরের পাঠানো এই মেসেজে বলা হয়েছে, এই সপ্তাহের মধ্যে মিড ডে মিলের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা দপ্তরের সচিবের কাছে জমা দিতে হবে।

বন্ধ হবে মিড ডে মিল?

আর এর পরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটি উঠে আসছে, তা হল, এবার কি মিড ডে মিল প্রকল্পে শিশুদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে চাইছে কেন্দ্র? ১০০ দিনের কাজ (MGNREGA) আবাস যোজনার (Awas Yojana) এর মত মিড ডে মিল প্রকল্পেও বরাদ্দ বন্ধ করে দিতে চাইছে দিল্লী?

PWC Yearly Increment

রাজ্যের Mid Day Meal প্রকল্পে বিরাট দূর্নীতি হয়েছে বলে বহুবার অভিযোগ করেছে বিজেপি এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার সঙ্গে অন্যান্য বিরোধী দলগুলিও যথাযোগ্য সঙ্গত করেছে। এরপরে কেন্দ্রীয় সরকারের টিম পৌঁছে গিয়েছে। রাজ্যে পরিদর্শন করেছে বিভিন্ন স্কুলে চলা মিড ডে মিল প্রজেক্ট। তবে সেন্ট্রাল টিমের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আধিকারিকেরাও যৌথভাবে ওই পরিদর্শন করেছিলেন। কিন্তু তারপরে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ওই সেন্ট্রাল টিমের আধিকারিকেরা রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করেই রিপোর্ট দাখিল করে দিয়েছেন। আর তারপরেই বিষয়টি নিয়ে যথারীতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

রাজ্য সরকারের তরফেও জেলা প্রশাসনকে স্কুলগুলিতে Mid Day Meal চলা নিয়ে বেশ কিছু গাইডলাইন জারি করেছে। যেখানে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, ব্যাংক একাউন্টের ক্ষেত্রে। গাইডলাইনে বলা হয়েছে, রাজ্যজুড়ে মিড ডে মিলের একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে। জেলাগুলির তরফে প্রয়োজন অনুযায়ী রিকুইজিশন পাঠাতে হবে। তার অর্থ, মিড ডে মিল প্রকল্পের একাধিক অ্যাকাউন্ট বা জেলা ভিত্তিক অ্যাকাউন্ট থাকবে না। রাজ্যওয়ারী একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে।

আরও পড়ুন, রাশিফল জানলেই লটারি জেতা অনেক সহজ। এই টিপস ফলো করুন।

যেখান থেকে মিড ডে মিল প্রকল্পের কাজকর্ম চালানো হবে। এবার যদি দেখা যায়, মিড ডে মিল প্রকল্পের কোনো জায়গায় দুর্নীতি হয়েছে, যদিও এখনও পর্যন্ত সেরকম রিপোর্ট পাওয়া যায়নি, তবে দুর্নীতির কোনো আভাস পাওয়া গেলেও সেক্ষেত্রে যথাযোগ্য কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। তার জন্য বিদ‍্যালয়ে চলা শিশুদের জন্য Mid Day Meal সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া যায় না। কেন্দ্রীয় সরকার মিড ডে মিল প্রকল্পে খুব সামান্যই বরাদ্দ করে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে একেবারেই যুক্তিযুক্ত নয়।

আরও পড়ুন, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বাতিল ৩২০০০ শিক্ষকদের বিপদ।

রাজ্যের তরফে বিভিন্নভাবে মিড ডে মিল প্রকল্পে স্কুলগুলিতে সহায়তা করার চেষ্টা হয়ে থাকে। অধিকাংশ স্কুলগুলি শিশুদের জন্য মিড ডে মিল প্রকল্প সঠিকভাবেই পরিচালনা করে। তবে এবার শিক্ষা দপ্তরের পাঠানো ওই টেক্সট মেসেজ থেকেই প্রশ্নটা সামনে আসতে শুরু করেছে। বাংলার প্রতি দিল্লির এই বঞ্চনা নিয়ে দলমত নির্বিশেষে রাজ্যের মানুষেরা সরব হতে শুরু করেছেন।

যদিও এই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছে বিজেপি। তাদের কথায়, কেন্দ্রে কাছ থেকে টাকা প্রাপ্ত টাকা রাজ্য ইচ্ছেমতো খরচ করবে, হিসাব দেবে না। জনগনের টাকা পার্টি ফান্ডে ঢোকাবে, নেতাদের খাটের তলায় পাওয়া যাবে। তাই কেন্দ্র হিসেব চাইছে। হিসেব না দিলে পরের কিস্তির টাকা পাবেনা, এটাই তো স্বাভাবিক! ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। Mid Day Meal এর হিসাব না দিলেও তাই হবে।